ফুটবল বিশ্বকে সবচেয়ে বড় উপহার দিয়েছিল স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা। অবশ্য তার প্রতিদানও কড়ায় গণ্ডায় দিয়েছেন সে তারকা। যার পায়ের যাদুতে বিমোহিত পুরো ফুটবল বিশ্ব। ২০০৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে পেশাদার ফুটবল খেলার পর তৎকালীন বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে তিক্ততা নিয়ে বার্সেলোনা ছাড়েন তিনি। এতক্ষণে চিনে যাওয়ার কথা। জ্বি বলছি সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক লিওনেল মেসির কথা। বার্সেলোনা প্রাণের ক্লাব, এখানেই ক্যারিয়ার শেষ করতে চান এমন কথা বহুবার বলেছিলেন লিও। সেই মেসিই এখন বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে। যদিও কাতালানরা নতুন করে চাচ্ছে তাদের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়কে পুনরায় ক্লাবে ফেরাতে। তবে যতদূর জানা যায় এখনই মেসি ফিরছেন না। কেননা পিএসজির সঙ্গে নতুন চুক্তির দাঁড়প্রান্তে মেসি। তবে কাতালান ক্লাবটি ঘিরে প্রতিনিয়ত স্মৃতিকাতরতায় ভোগেন তিনি। হয়তো ফিরে যাওয়ার টানও অনুভব করেন। কিন্তু বার্সেলোনার সংবাদমাধ্যম ‘এল পেরিওদিকো’ যে সংবাদ প্রকাশ করেছে, তা কানে গেলে মেসি কোনোভাবেই খুশি হওয়ার কথা নয়। স্প্যানিশ সংবাদ মাধ্যম ‘এল পেরিওদিকো’ এর বরাত দিয়ে প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ফোর্বস জানাচ্ছে, জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ বার্সার সভাপতি থাকাবকালীন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তখনকার বোর্ডের সদস্যরা ক্লাবটির বেশ কয়েকজন তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে আক্রমণাত্মক ও অপমানসূচক কথা বলেন। আরও পড়ুন: টাইগারদের সঙ্গে পাওয়ার হিটিং নিয়ে কাজ করতে চান জুলিয়ান উড (ভিডিও) ফোর্বসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় তখনকার বার্সেলোনার আইন বিভাগের প্রধান রোমান গোমেজ পন্টি মেসি সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। মেসিকে তিনি ‘নর্দমার ইঁদুর’ ও মেসির উচ্চতা নিয়ে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘ও তো হরমোনের সমস্যার জন্য বামন।’ মেসি ছাড়া সমালোচনার শিকার হন জেরার্ড পিকে ও সার্জিও বুসকেটস। এ ছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটিতে ছিলেন বার্সার সাবেক সভাপতি অস্কার গ্রাউ (তখন ক্লাবটির প্রধান নির্বাহী), নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করা জর্দি মইক্স, ওরিয়ল তোমা ও ডেভিড বেলভের। আর্থিক বিভাগের পরিচালক পানচো শ্রোডার এবং উদ্ভাবন ও কৌশল বিভাগের হাভিয়ের সোবরিনোও এই আলোচনায় সংযুক্ত ছিলেন। সেই হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনে মেসিকে নিয়ে বার্তোমেউর প্রতি পন্টি লিখেছিলেন, বার্তো, ওই নর্দমার ইঁদুরটির (মেসি) প্রতি তুমি এতটা ভালো হতে পারো না। ক্লাব তাকে সবকিছু দিয়েছে, আর সে সাইনিং, দলবদল, চুক্তি নবায়ন, স্পনসর এসব নিয়ন্ত্রণ করে নিজের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছে। এখানেই থামেনি বার্সা বোর্ডের সাবেক এই সদস্য। মেসিকে নিয়ে আরও কড়া ভাষা লেখেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই হরমোনাল বামনের (মেসি) কারণে ক্লাব এবং আমরা যারা ক্লাবের হয়ে কাজ করি, তারা ব্ল্যাকমেইল ও অসম্মানের শিকার হয়েছি। অথচ বার্সেলোনার কারণে তার জীবন বেঁচেছে। কিন্তু মহামারিতে যখন সবকিছু স্থবির, তখন তুমি সেই বিখ্যাত হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পেয়েছিলে, ‘প্রেসিডেন্ট, বাকিদের বেতন কাটতে পারো, কিন্তু লুইস (সুয়ারেজ) এবং আমাকে ছুঁয়ো না।’ বার্সার সাবেক সভাপতি বার্তোমেউর প্রতি গ্রুপে এই বার্তা পাঠান পন্টি। উল্লেখ্য, ২০০৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার হয়ে মেসি ৫২০টি ম্যাচ খেলে ৪৭৪টি গোল করেছিলেন। ২০০০ সালে বার্সার বয়সভিত্তিক দলে যোগ দেয়ার পর ২০০৪ সালে মূল দলে সুযোগ পান বার্সার এলএমনটেন। ২০২১ সালে বার্সা ছাড়ার আগে কাতালান ক্লাবটির হয়ে ৩৫টি শিরোপা জিতেছেন মেসি। ৪ বার জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ, ১০ বার জিতেছেন লা লিগা। ৭ বারের এই ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়কে লা লিগার বেতন কাঠামোনীতির কারণে ধরে রাখতে পারেনি বার্সা।